শীতকাল! মরশুমি সবজি এবং ফলে কিভাবে তরতাজা, রোগমুক্ত রাখবেন নিজেকে?

প্রতিটি ঋতুতে সহজাত ভাবে প্রকৃতি যে সমস্ত শাক সবজি, ফল আমাদের উপহার দেয় সেগুলি প্রত্যেকটি স্বাস্থ্যসম্মত ভাবে তৈরী হয়। নির্দিষ্ট ঋতুতে উৎপাদিত ফসলের স্বাদ যেমন ভালো হয় তেমনি সেই সময়ে শরীরে জন্য প্রয়োজনীয় উপাদানগুলি সেগুলিতে থাকতে পারে। তাই রোগমুক্ত এবং তরতাজা থাকতে মরশুমি ফল এবং শাকসবজি আমাদের খাদ্যতালিকাতে অপরিহার্য।

শীতকালে আমাদের শরীরে ভিটামিন ‘সি’ যুক্ত খাবারের চাহিদা বেশী হয়। আসুন নিম্নের শীতকালীন সবজি গুলির একটি তালিকা থেকে তার খাদ্যগুণ সম্বন্ধে জেনে নিই।

গাজর

গাজর ভিটামিন এ, বি, বি 2, বি 3, সি, ডি, ই এবং কে ভিটামিন এবং পুষ্টির অন্যতম উৎস গাজর। অন্য ফল ও সব্জির তুলনায় গাজরে ক্যারোটিনের পরিমাণ সবচেয়ে বেশী।

গাজরের উপকারিতা

ত্বকের ঔজ্জ্বল্য ও মসৃণতা বজায় রাখে, চুলের স্বাস্থ্য ও নখ ভাল রাখে।

গাজরের ক্যারোটিন দৃষ্টিশক্তি উন্নত করে, রাতকানা রোগ প্রতিরোধ করে।

ক্যান্সার, ডায়াবেটিস, হৃদরোগ প্রতিরোধে সহায়তা করে গাজর।

শরীরের বাড়তি মেদ ঝরাতে গাজরের ভূমিকা অনবদ্য।

ওলকপি / শালগম

এটি শীতকালে প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়। এটি স্বাদে মিষ্ট শ্বেতসার(starch) সমৃদ্ধ। এটি প্রচুর ফাইবার,কে, এ, সি, ই, বি , বি 3, বি 5, বি 6, বি 2, ফোলেট ভিটামিন ও মিনারেল সমৃদ্ধ।

ওলকপি/শালগমের উপকারিতা

এটি ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সহায়তা করে। দৈনন্দিন খাদ্য তালিকাতে শালগমের বা ওলকপির উপস্থিতি স্তন ক্যান্সার, কোলন এবং রেকটাল টিউমারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।

এর প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ‘কে’ সমৃদ্ধ যা হার্ট অ্যাটাক, বিভিন্ন প্রকার হৃদ রোগ।

কার্ডিওভাসকুলার সিস্টেমকে আরও শক্তিশালী করতে সহায়তা করে।

ফুসফুস সুস্থ রাখে।

খাদ্যতালিকাতে ওলকপির উপস্থিতি অস্টিওপরোসিসের এবং রিমোটয়েড আর্থ্রাইটিস প্রতিহত করে।

এতে উপস্থিত প্রচুর ফাইবার পাচনতন্ত্র কে ভালো রাখে।

সরিষা শাক

সরিষা শাকে ক্যালোরি কম এবং ভিটামিন বি 1, বি 2, বি 6, সি, ই, কে, ফলিক অ্যাসিড এবং ক্যালসিয়াম, ক্যারোটিন, ম্যাঙ্গানিজ, তামা, ম্যাগনেসিয়াম, প্রোটিন, পটাসিয়াম এবং লোহা প্রভৃতি মিনারেল থাকে।

সরিষা শাকের উপকারিতা

এটি অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ, যা ক্যান্সার প্রতিহত করতে সহায়তা করে।

হৃদরোগ প্রতিহত করে।

হাড়ের স্বাস্থ্য ভাল রাখে।

এটি ফাইবার সমৃদ্ধ, তাই কোষ্ঠকাঠিন্য ও রক্তক্ষরণ প্রতিরোধ করে।

আর্থ্রাইটিস,অস্টিওপরোসিস এবং অ্যানিমিয়া প্রতিরোধে সহায়তা করে।

গর্ভবতী মায়েদের জন্য সরিষা শাক অত্যন্ত উপকারী।

মেথি শাক

মেথি শাকের খাদ্যগুণ অপরিসীম। এতে প্রোটিন, পটাসিয়াম, ভিটামিন এ, বি, বি 3, সি, এবং ই, এবং ফাইটোস্ট্রোজেন রয়েছে।

মেথি শাকের উপকারিতা

এটি রক্তে কোলেস্টেরল, শর্করার পরিমাণ কমায় বলে ডায়াবেটিস ও হৃদরোগ প্রতিহত করতে সহায়তা করে।

স্তন বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।

এটি হাঁপানি, ব্রঙ্কাইটিস, আর্থ্রাইর্টিস, ত্বকের সমস্যা গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল প্রদাহের জন্যও ব্যবহৃত হয়।

মাসিকের সময়কালীন ব্যাথা প্রশমন করে, হরমোন এবং প্রজনন ব্যাধির চিকিৎসায় সাহায্য করে।

পালং শাক

শীতকালের শুষ্ক আবহাওয়াতে পালং শাক খাওয়া অত্যন্ত জরুরী। এতে ক্যালোরি কম থাকে। পালং শাকের পুষ্টিগুণ অনেক বেশী।

পালং শাকের উপকারিতা

হাড়ের স্বাস্থ্য ভালো করে, শক্ত করে।

রক্তচাপ কমায়

রক্তে আয়রণের ঘাটতি মেটায়।

কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করে।

ক্যান্সার, হার্ট ডিজিজ, ডায়াবেটিস এবং হাঁপানি রোগ প্রতিরোধে সাহায্য

গর্ভবতী মহিলাদের জন্য উপকারী।

মটরশুঁটি

শীতকালে বাজারে মটরশুঁটি প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়। সবুজ মটরশুঁটি অত্যন্ত পুষ্টিকর, ভিটামিন, মিনারেল, অ্যাণ্টি অক্সি-ডেণ্ট সমৃদ্ধ। সবুজ মটর ভিটামিন সি, বি-কমপ্লেক্স ভিটামিন, ফোলেট এবং ফাইটোস্টেরল সমৃদ্ধ।

মটরশুঁটির উপকারিতা

রক্তে কলেস্টেরলের মাত্রা হ্রাস করে।

ওজন হ্রাস করতে সাহায্য করে। কারণ এতে ক্যালোরির মাত্রা কম এবং ফাইবার যুক্ত।

মূলো

মূলোতে রয়েছে সোডিয়াম, ভিটামিন সি, পটাসিয়াম, ফসফরাস, সেইসাথে ম্যাগনেসিয়াম।

মূলোর উপকারিতা

এটা পেশী, নার্ভ এবং রক্ত প্রবাহ মাত্রা বজায় রাখতে সাহায্য করে।

হাড় এবং দাঁত শক্তিশালী রাখে।

মূলো ত্বকের ঔজ্জ্বল্য বজায় রাখে।

এটি ফ্লু জাতীয় রোগ,ক্যান্সার এবং করোনারি হার্ট ডিজিজ প্রতিহত করতে সহায়তা করে।

বীট

বীট অত্যন্ত পুষ্টিকর একটি সবজি। এতে আয়রন, ভিটামিন ‘এ’, ‘বি’ 6 ও ‘সি’ এবং মিনারেল রয়েছে।

বীটের উপকারিতা

লিভার detoxification প্রক্রিয়া সাহায্য করে।

ডায়াবেটিস এবং হার্টের রোগের সম্ভাবনা সীমিত করে।

আমাদের রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।

বেগুন

বেগুণের অনেক পুষ্টিগুণ আছে। এতে প্রচুর ফাইবার, ম্যাঙ্গানীজ, ভিটামিন ‘বি’ আছে।

বেগুণের উপকারিতা

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে।

ক্যান্সার, হার্টের রোগ এবং অন্যান্য ক্রনিক রোগ প্রতিরোধ করতে পারে।

ওজন কমানোর জন্য বেগুন উপযোগী।

মস্তিষ্কের ক্ষতি প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে

ত্বক এবং চুলের ঔজ্জ্বল্য বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।

কমলালেবু

এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ‘সি’ আছে। এছাড়া পটাসিয়াম, মিনারেল, ফোলেট এবং ফাইবার আছে।

কমলালেবুর উপকারিতা

ত্বকের ঔজ্জ্বল্য বাড়ায়।

রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।

কোলেস্টেরল, ব্লাড প্রেসার, ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে রাখে।

আপেল

এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ‘সি’ ও ফাইবার আছে। পুষ্টির জন্য আপেল অনবদ্য।

উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস এবং হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাস করে।

শীতকালে আরো বিভিন্ন ধরনের শাকসবজি পাওয়া যায়। যার প্রতিটির মধ্যে কিছু না কিছু খাদ্যগুণ অবশ্যই আছে। তাই মরশুমি শাকসবজি। ফলমূল খান। নিজেকে তরতাজা রাখুন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are makes.