প্রযুক্তির অগ্রগতির কল্যাণে এবার হাবলের তুলনায় আরও অনেক শক্তিশালী এই চোখ মানুষকে অভাবনীয় ক্ষমতা দিচ্ছে
জেমস ওয়েব টেলিস্কোপের গুরুত্ব বুঝতে হলে সেটির পূর্বসূরি হাবল মহাকাশ টেলিস্কোপের অবদান জানতে হবে। প্রযুক্তির অগ্রগতির কল্যাণে এবার হাবলের তুলনায় আরও অনেক শক্তিশালী এই চোখ মানুষকে অভাবনীয় ক্ষমতা দিচ্ছে।
মহাকাশে জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ হাবলের উত্তরসূরি হিসেবে পরিচিত। মহাকাশচারীরা একাধিকবার নতুন যন্ত্রাংশ বসিয়েছেন বলে হাবল অনেক যুগান্তকারী আবিষ্কার করতে পেরেছে। হাবল ভূ-পৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৫০০ কিলোমিটার উপরে বিরাজ করছে।
নতুন টেলিস্কোপটি কিন্তু মহাকাশচারীদের ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকবে। পৃথিবীর অন্ধকার অংশ থেকে প্রায় ১৫ লাখ কিলোমিটার দূরে সেটি চূড়ান্ত অবস্থান নিচ্ছে। পৃথিবীর সঙ্গে সঙ্গে এই টেলিস্কোপ সূর্য প্রদক্ষিণ করবে।
স্যাটেলাইটের নীচের অংশ সব সময়ে সূর্যের দিকে মুখ করে থাকছে। প্রায় টেনিস কোর্টের মাপের বড় একটি ছাতা মেলে ধরা হচ্ছে। সেটি টেলিস্কোপের পরিমাপ যন্ত্রগুলিকে আলোর বিঘ্ন থেকে রক্ষা করছে।
সাড়ে ছয় মিটার বড় আয়নাটি হাবল টেলিস্কোপের তুলনায় অনেক বড়। সোনায় মোড়া সেই আয়নার ১৮টি অংশ রয়েছে, যা খুব ভালো করে ইনফ্রারেড রশ্মির প্রতিফলন ঘটাবে। আয়নাটি বেরিলিয়াম দিয়ে তৈরি। হালকা এই ধাতু তীব্র শীতের মুখেও বেঁকে যাবে না।
ভাবাই যায় না যে মাত্র ৫০ গ্রাম সোনা দিয়েই সব অংশ মোড়া সম্ভব হয়েছে। প্রত্যেকটি অংশের পেছনে কনট্রোল ইউনিট রয়েছে। ফলে সেগুলি ছয়টি দিশায় হেলানো ও ঘোরানো যায়। স্পষ্ট ছবি পেতে প্রত্যেকটি সেগমেন্টকে সবার আগে নিখুঁত অবস্থানে আনতে হবে।
মূল বড় আয়নাটি আলো ধারণ করে একটি ছোট আয়নার দিকে প্রতিফলিত করে। সেটি সব আলো একত্র করে অন্য দুটি আয়নার মাধ্যমে পরিমাপ যন্ত্রের দিকে পাঠিয়ে দেয়। এভাবে বিশ্বব্রহ্মাণ্ড সম্পর্কে আরও গবেষণা চালানো হবে। ব্রহ্মাণ্ডের সম্প্রসারণ ঘটে চলেছে। গ্যালাক্সির দূরত্ব যত, তত বেশি গতিতে সেগুলি আমাদের থেকে দূরে চলে যাচ্ছে। সেই সঙ্গে দূরের মহাজাগতিক বস্তুগুলির আলোও দূরে চলে যাচ্ছে। সে কারণে নতুন টেলিস্কোপটি দীর্ঘ তরঙ্গের ইনফ্রারেড আলো ধারণ করতে বিশেষভাবে দক্ষ।
হাবল টেলিস্কোপের তুলনায় সেটি সময়ের আরও গভীরে উঁকি মারবে। সেই সঙ্গে গ্যালাক্সির প্রথম যুগের নক্ষত্রগুলিকে আরও ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করবে। ইনফ্রারেড চোখ দিয়ে টেলিস্কোপটি এমনকি ঘন ধুলার মেঘ ভেদ করে দেখতে পারবে।
জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা নক্ষত্র ও গ্রহের জন্ম রহস্য সম্পর্কে আরও জ্ঞান অর্জনের আশা করছেন। আমাদের নিজস্ব সৌরজগতের আদিকালের অনেক নিদর্শনও পরীক্ষা করবে এই টেলিস্কোপ। তখন একেবারে বহির্সীমানায় বরফের মতো শীতল মহাজাগতিক বস্তুগুলি সম্পর্কে হয়তো অনেক কিছু জানা যাবে। টেলিস্কোপের বিশাল আয়তনের কারণে সেটিকে ভাঁজ করে উৎক্ষেপণ করতে হয়েছিল।